বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা শুধু একটি কাপড় নয়। এটি দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ, স্বাধীনতা এবং জাতীয় মর্যাদার প্রতীক। প্রতিটি রঙ, প্রতীক এবং নকশার আকারে লুকিয়ে আছে দেশের স্বাধীনতা ও সংগ্রামের গল্প। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব পতাকার ইতিহাস, নকশা, মুক্তিযুদ্ধকালীন ব্যবহার, রঙের তাৎপর্য এবং আইনি বিধি।
Quick Facts
- প্রথম নকশা: ১৯৭০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- প্রথম উত্তোলন: ২ মার্চ ১৯৭১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- নকশাকাররা: আ. স. ম. আবদুর রব, কাজী আরেফ আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ, শিবনারায়ণ দাস
- বর্তমান আকার গ্রহণ: ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২
- আনুপাতিক মাপ: দৈর্ঘ্য:প্রস্থ = ১০:৬
- প্রধান রঙ: সবুজ পটভূমি, লাল বৃত্ত
- জাতীয় পতাকা দিবস: ২ মার্চ
পতাকার ইতিহাস: প্রথম নকশা ও ধারণা
১৯৭০ সালের শেষভাগে বাংলাদেশের ছাত্রনেতারা পাকিস্তানের পতাকা থেকে স্বতন্ত্র জাতীয় পরিচয় প্রকাশের জন্য নতুন পতাকা প্রয়োজনীয় মনে করেন।
প্রথম নকশায় ছিল:
- সবুজ পটভূমি: দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নবজাগরণের প্রতীক
- লাল বৃত্ত: শহীদদের রক্ত এবং স্বাধীনতার সূর্য
- মাঝখানে বাংলাদেশের মানচিত্র: স্বাধীনতা ও ভূখণ্ডের প্রতীক
নকশাকারদের মধ্যে ছিলেন:
- আ. স. ম. আবদুর রব
- কাজী আরেফ আহমেদ
- শাহজাহান সিরাজ
- শিবনারায়ণ দাস
১৯৭১ সালের ২ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্বরে, এই পতাকা প্রথমবার উত্তোলন করা হয়। আ. স. ম. আবদুর রব নিজেই পতাকা উত্তোলন করেন। এই দিনটি পরে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্মরণ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পতাকার গুরুত্ব
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই পতাকা দেশের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
- সবুজ পটভূমি: দেশের উর্বর ভূমি এবং তরুণ প্রজন্মের প্রাণশক্তি
- লাল বৃত্ত: শহীদদের রক্ত ও স্বাধীনতার সূর্যোদয়
মুক্তিযোদ্ধারা এটি ব্যবহার করতেন সাহস, ঐক্য ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য। এটি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং স্বাধীনতার সংকল্পকে দৃঢ় করেছিল।
স্বাধীনতার পর পতাকার পরিবর্তন
১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে বর্তমান পতাকার নকশা চূড়ান্ত করা হয়। প্রধান পরিবর্তনগুলো ছিল:
- মানচিত্র অপসারণ: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানচিত্র বাদ দেওয়া হয়
- লাল বৃত্তের অবস্থান: সামান্য ডানদিকে সরানো, যাতে কেন্দ্রীভূত দেখায়
- আনুপাতিক মাপ: দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬
রঙের স্পেসিফিকেশন:
- সবুজ: “প্রসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রিন”
- লাল: “প্রসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২আরএস”
বর্তমান পতাকা দেশের মর্যাদা ও ঐতিহ্য প্রকাশ করে এবং রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্বে ব্যবহৃত হয়।
পতাকার প্রতীকী অর্থ
- সবুজ পটভূমি: দেশের উর্বরতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নবজাগরণ
- লাল বৃত্ত: শহীদদের রক্ত, স্বাধীনতার সূর্য
- বিশেষ রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রীর পতাকা: গাঢ় কারমাইন পটভূমি, কেন্দ্রে স্বর্ণালী জাতীয় প্রতীক (চারটি তারা, শাপলা ফুল, ধানদানি)
আইনি বিধি ও মর্যাদা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আইন-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী:
- উত্তোলনের স্থান ও সময়: সরকারি ভবন, দূতাবাস, গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, সংসদ ভবন, জেলা-উপজেলা কার্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে উত্তোলন বাধ্যতামূলক
- রাতের বেলা: পতাকা উত্তোলন নিষিদ্ধ
- শোক দিবস: ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৫ আগস্ট ইত্যাদিতে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়
- বিশেষ মর্যাদা: রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা অনুমোদন সাপেক্ষে পতাকা উত্তোলন করতে পারেন
- আইনি শাস্তি: পতাকার অপমান বা বিকৃত ব্যবহার দণ্ডনীয়; সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা
- শ্রদ্ধা: পতাকা কখনো মাটি স্পর্শ করবে না বা অশুদ্ধভাবে ব্যবহার করা যাবে না
ইতিহাসের ধাপসমূহ (Timeline)
তারিখ | ঘটনা |
---|---|
১৯৭০ | প্রথম পতাকার নকশার ধারণা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
২ মার্চ ১৯৭১ | প্রথম পতাকা উত্তোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
১৯৭১ | মুক্তিযুদ্ধের সময় পতাকা স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার |
১৭ জানুয়ারি ১৯৭২ | বর্তমান পতাকার নকশা সরকারি অনুমোদন |
প্রতি বছর ২ মার্চ | জাতীয় পতাকা দিবস উদযাপন |
ঐতিহাসিক দলিল ও উৎস
- সংবিধান: জাতীয় পতাকা সবুজ পটভূমির মধ্যে লাল বৃত্ত হিসেবে সংজ্ঞায়িত
- মুক্তিযুদ্ধকালীন দলিল: ও সরকারি প্রজ্ঞাপন থেকে পতাকার নকশা ও রঙ নির্ধারণ
- জাতীয় পতাকা দিবস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পতাকা উত্তোলনের স্মরণে
এই HTML কোডটি আপনার প্রদত্ত আর্টিকেল থেকে তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে স্টাইল পরিবর্তন করতে পারেন।