ফলাফল, ফেল, আত্মহত্যা: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এক নির্মম মুখোশ উন্মোচন

Murshid Ibne Masud Lohit
Written by

ফলাফল, ফেল, আত্মহত্যা: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এক নির্মম মুখোশ উন্মোচন

লেখক: মুরশিদ ইবনে মাসদ লোহিত

ভাষা: বাংলা
সংকলিত ও বিশ্লেষিত: ১০ জুলাই ২০২৫ থেকে ১৭ জুলাই ২০২৫


(বিশ্লেষণমূলক বিশেষ প্রতিবেদন)

ভূমিকা: একটি নম্বর, একটি জীবন, একটি লাশ

২০২৫ সালের ১০ জুলাই, দুপুর ২টায় সরকারিভাবে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আত্মহত্যার খবর আসতে থাকে। খুলনা, চট্টগ্রাম, নাটোর, বগুড়া, ঢাকা—দেশজুড়ে কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ফেল করার কারণে আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনাগুলোর সংবাদমাধ্যমে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ থাকলেও, এর অন্তর্নিহিত সামাজিক ও মানসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গভীর আলোচনা এখনও অনুপস্থিত।

আমি নিজেও ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম এবং উত্তীর্ণ হয়েছি। ফল প্রকাশের সেই মুহূর্তের উত্তেজনা, ভয়, ও সামাজিক চাপ আমি নিজ চোখে দেখেছি—নিজের ভেতরও অনুভব করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আজ লিখছি।

বাংলাদেশে ‘ফেল’ মানে শুধুই একাডেমিক ব্যর্থতা নয়—এটা যেন এক সামাজিক মৃত্যুদণ্ডের মতো আচরণ। পরিবার, প্রতিবেশী, এমনকি শিক্ষকরাও অনেক সময় এই “অপরাধের” বিচারক হয়ে দাঁড়ায়। অথচ এই শাস্তি কাদের জন্য? মাত্র ১৬ বা ১৭ বছরের এক কিশোর-কিশোরী, যার জীবনের মানে বোঝার সময়টাই এখনো ঠিকমতো শুরু হয়নি।


পরিসংখ্যান: আত্মহত্যার পেছনের অঙ্ক কত ভয়াবহ?

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ৩১০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪৯.৪ শতাংশ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী, এবং প্রায় ৬৫ শতাংশই কিশোর (১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী)। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আত্মহত্যার প্রধান কারণ হিসেবে অনেকেই উল্লেখ করেছে পরীক্ষায় ‘অপেক্ষাকৃত খারাপ ফল’, পরিবার বা সমাজের উচ্চ প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতা, এবং চাপ সামলাতে না পারা।

এই পরিসংখ্যান আমাদের কঠোরভাবে মনে করিয়ে দেয়—নম্বরের নিচে কখনও কখনও একজন কিশোরের ভবিষ্যৎ, আশা, এবং প্রাণ গুম হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র:


২০২৫: ফলাফলের চাপে সম্ভাবনার নীরব মৃত্যু

২০২৫ সালের ১০ জুলাই, দুপুর ২টায় এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কমপক্ষে ৭টি আত্মহত্যার খবর প্রকাশ পেয়েছে। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী:

  • ৫ জন শিক্ষার্থী ফলাফলে অকৃতকার্য হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে।
  • কুমিল্লা, বগুড়া, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার কিশোরী শিক্ষার্থীরা গলায় ফাঁস দিয়ে কিংবা বিষ পান করে আত্মহত্যা করে।
  • ২ জন শিক্ষার্থী প্রত্যাশার চেয়ে কম ফল পাওয়ার হতাশা থেকে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
  • আরও ১ জন ‘মধ্যম’ ফলাফলের পর পরিবারিক চাপে আত্মহত্যা করে।

এই পরিসংখ্যান বাস্তবে হয়তো আরও দীর্ঘ। কারণ আত্মহত্যার অনেক ঘটনা সমাজিক লজ্জা, পরিবারিক চাপে কিংবা আইনি জটিলতার কারণে প্রকাশ পায় না।

এটা শুধু সংখ্যা নয়—এটা আমাদের নীরব ব্যর্থতা। এই ঘটনাগুলো কেবল আত্মহত্যার সংখ্যা নয়—এগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। ফলাফল-কেন্দ্রিক সমাজে প্রতিভা, মানসিক স্বাস্থ্য কিংবা মানবিক মূল্যবোধের জায়গা কোথায়? একটা কিশোরী যখন গলায় ফাঁস দেয়, সে কেবল ‘ফেল’ করেনি—সে সমাজের চাপ, পরিবারের প্রত্যাশা, শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার ঔদাসীন্যের কাছে পরাজিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র:


শিক্ষা না শাস্তি? বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আত্মবিরোধী রূপ

মুখস্থের কারখানা, ভাবনার মৃত্যু

বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা মুখস্থনির্ভরতা, কোচিং বাণিজ্য এবং প্রশ্ন ফাঁস নির্ভর এক যান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। "সৃজনশীল প্রশ্ন" নামে যে শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা হয়েছিল ২০১০ সালের পর, সেটি বাস্তবিক অর্থে সৃজনশীলতার পরিবর্তে আরেক ধরনের মুখস্থের চাপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে বহু শিক্ষার্থী প্রতিদিন গাইড বই, সাজেশনপত্র, প্রাইভেট টিউটর ও কোচিং ক্লাসে সময় কাটায়। পাঠ্যবইয়ের গভীর বোঝার বদলে, মুখস্থভিত্তিক প্রস্তুতিই হয়ে ওঠে ভালো ফলের মূল কৌশল।

শিক্ষা মানেই পরীক্ষা, আর পরীক্ষা মানেই আতঙ্ক

  • ক্লাস ৯-১০-এ ওঠার পর থেকেই সন্তান আর "মানুষ" থাকে না, সে হয়ে ওঠে “একটি পরীক্ষার প্রকল্প”
  • পরিবারের পক্ষ থেকে বন্ধ হয়ে যায় খেলা, ছবি দেখা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ঘুমও। কারণ, “SSC-র সময় এগুলো একদম চলবে না।”

সামাজিক মনস্তত্ত্ব: ফলাফল না পেলে তুমি ‘কেউ’ নও

একজন ফেল করা শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বড় শাস্তি হয় পরীক্ষার নম্বর নয়—সমাজের মূল্যায়ন। চারপাশের প্রতিটি কণ্ঠস্বর তার দিকে ছুড়ে দেয় অপমান, অবজ্ঞা, কিংবা করুণা। পরিবার, শিক্ষক, প্রতিবেশী—সবাই যেন ধীরে ধীরে তার চারপাশে এক ধরনের নীরব আত্মহত্যার মঞ্চ তৈরি করে।


রিফাতের গল্প (কাল্পনিক): শিক্ষাব্যবস্থার আড়ালে বাংলাদেশের এক নীরব বাস্তবতা

রিফাত, নওগাঁর একটি মফস্বল এলাকার দশম শ্রেণির ছাত্র। সে চুপচাপ, সংবেদনশীল এবং শিল্প-মনস্ক ছিল—গণিতে দুর্বল, কিন্তু আঁকায় ছিল আশ্চর্য প্রতিভাবান। এসএসসি পরীক্ষায় গণিতে ফেল করল। ফলাফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাবার প্রতিক্রিয়া ছিল, “তুই আমার মুখ পুড়ালি।” মা নীরবে কথাবার্তা বন্ধ করে দিলেন। স্কুলের বন্ধুরা মেসেঞ্জারে কটাক্ষ করল, “ভাই, প্রথমে পাস করিস, তারপর ট্যালেন্টের কথা বলিস।” অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক মনে হলেও, তৃতীয় দিন সকালে রিফাতকে তার ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

তার পড়ার টেবিলে পাওয়া যায় একটি ছোট চিরকুট—

“আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা কেউ তা দেখোনি।”

এই একটি বাক্য যেন আমাদের পুরো সমাজ, পরিবার, এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মুখোশ খুলে দেয়। রিফাত কোনো ব্যতিক্রম নয়—এটা একটি পরিচিত গল্পের পরিচিত পরিণতি। এটা শুধু রিফাতের গল্প নয়, এটা লক্ষ লক্ষ রিফাতের গল্প, যাদের পরিচয় আমরা জানি না, কারণ তারা কেবল আরেকটি সংখ্যা, আরেকটি “ফেল করা ছাত্র” হিসেবে হারিয়ে যায়।

এই সমাজে প্রতিদিন নতুন নতুন রিফাত জন্ম নেয়—নতুন নতুন প্রতিভা, সংবেদনশীল হৃদয়, স্বপ্নবান কিশোর। কিন্তু আমরা তাদের দেখি না। আমরা কেবল মার্কশিট দেখি, GPA দেখি, ক্লাস পজিশন দেখি। আমরা কখনোই দেখি না—কে ভয় পাচ্ছে, কে চুপ করে যাচ্ছে, কে টানাপোড়েনে আছে।

রিফাতের শেষ চিরকুট ছিল এক রকম ‘অভিযোগপত্র’—যেখানে সে কোনো শিক্ষক, পরিবার বা সমাজের নাম নেয়নি, কিন্তু সবাইকেই অপরাধী করে গেছে


বিশ্বব্যাপী শিক্ষা সংকট ও বাংলাদেশের বাস্তবতা: এক গুরুতর সামাজিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত

বিশ্বজুড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট নতুন কিছু নয়। তবে বাংলাদেশে পরীক্ষার ফলাফলকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার আশঙ্কাজনক হার শুধু জাতীয় সমস্যা নয়, এটি উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি গভীর সামাজিক সংকটের প্রতিচ্ছবি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যা বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় প্রধান মৃত্যুর কারণ। অনেক উন্নত দেশ তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সামাজিক সহায়তাকে অগ্রাধিকার দেয়।

পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘ব্যর্থতা’ কে জীবনের অঙ্গ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়, যা শিক্ষার্থীদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ফলাফলই সামাজিক মর্যাদার প্রধান মাপকাঠি।

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সেবা নেই। নেই স্কুল বা কলেজে কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, নেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ, নেই পরিবারিক সহানুভূতির চর্চা। ফলে হতাশা, ভয়, অপমান—সবই জমা হয় এক জটিল বিষাক্ত জায়গায়।


আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য ও বাংলাদেশের তুলনামূলক চিত্র

অন্য অনেক দেশে শিক্ষা মানে কেবল পরীক্ষায় পাস করা নয়—বরং শেখা, বিকাশ, এবং নিজের আগ্রহ-প্রতিভা আবিষ্কারের পথ।

  • ফিনল্যান্ডে, শিশুরা ছোটবেলা থেকে চাপমুক্ত পরিবেশে শিক্ষা পায়। প্রাথমিক স্তরে কোনো পরীক্ষা নেই, গ্রেডিংয়ের চেয়ে শেখার আনন্দকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
  • জাপানে, ছাত্রদের নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ, সম্মানবোধ শেখানো হয় স্কুলের পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে। তারা ব্যর্থতা থেকে শিখতে শেখে।
  • কানাডায়, শিক্ষার্থী শুধু একাডেমিক পারফরম্যান্স নয়, তার মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক অবদান, ও সৃজনশীলতায় মূল্যায়িত হয়।

এসব দেশের শিক্ষা কাঠামো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় যে— শিক্ষা মানে কেবল রেজাল্ট নয়, শিক্ষা মানে মানুষ গড়ে তোলা।

বাংলাদেশে সেই ধরনের কাঠামো গড়ে তোলা কি অসম্ভব? না, অসম্ভব নয়। তবে দরকার রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা, সামাজিক উপলব্ধি, এবং শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্মিলিত চেতনা


শিক্ষকদের ভূমিকা — শ্রেণিকক্ষে সহানুভূতির অনুপস্থিতি, নাকি অবজ্ঞার সংস্কৃতি?

একজন শিক্ষক কেবল পাঠদাতা নন—তিনি একজন দিশারী, একজন মানসিক পথপ্রদর্শক। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা একটি মানবিক দায়িত্ব থেকে ক্রমেই একটি শাসনমূলক কর্তৃত্বে পরিণত হয়েছে।

শ্রেণিকক্ষে আজও শিক্ষার্থীদের শুনতে হয়—

  • “তোর দ্বারা হবে না”
  • “তুই ফেল করবি নিশ্চিত”
  • “তুই ক্লাসের বোঝা”

এই বাক্যগুলো শুধু কথার আঘাত নয়, বরং তারা একজন শিক্ষার্থীর নিজের প্রতি বিশ্বাস ধ্বংস করার চাবিকাঠি। শিক্ষকেরা যদি অপমানকে পদ্ধতির অংশ বানিয়ে ফেলেন, তাহলে শ্রেণিকক্ষে কখনো শিক্ষা নয়—জন্ম নেয় ভয়ের পরিবেশ, নীরবতা, এবং ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া প্রতিভা।

দায়িত্বশীল শিক্ষকতা মানে শুধু পাঠদান নয়; একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, তাকে শুনে বোঝা, ভুল করলে ধৈর্য নিয়ে সংশোধন করা


করণীয়: ব্যর্থতা নয়, বিকল্প পথ শেখাও

  1. স্কুলে পরামর্শক (Counselor) নিয়োগ বাধ্যতামূলক করুন: সপ্তাহে অন্তত ১ দিন মানসিক স্বাস্থ্য অধিবেশন চালু করতে হবে।
  2. ফলাফলভিত্তিক সামাজিক মূল্যায়ন কমানো হোক: পরিবার ও মিডিয়াকে সচেতন করতে হবে: জীবনে একমাত্র সাফল্যের মানদণ্ড GPA নয়।
  3. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করুন: ক্লাসে মানসিক সহায়তা ও ইতিবাচক কথাবার্তার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার।
  4. পরীক্ষা কেন্দ্রিক নয়, দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষানীতি চাই: শুধু বইয়ের উত্তর মুখস্থ নয়—যার যার আগ্রহ, প্রতিভা ও বাস্তব জীবনের প্রয়োজন অনুযায়ী মূল্যায়ন দরকার।

উপসংহার: আজ তারা হারিয়েছে জীবন, কাল হতে পারে আপনার সন্তান।

একজন কিশোরের আত্মহত্যা শুধুমাত্র একটি পরিবারের ব্যক্তিগত শোক নয়। এটি আমাদের জাতির, সমাজের এবং বিশেষত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গভীর ব্যর্থতার প্রতীক

পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহানুভূতিপূর্ণ, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নয়, গুণাবলি ও চরিত্র বিকাশে জোর দেওয়া হবে।

যতক্ষণ এই মানসিকতা বদলাবে না, ততক্ষণ দেশের শত শত তরুণ আজকের মতো নিজেকে হারানোর পথ বেছে নেবে। আজকের যে শোক আমরা দেখছি, আগামীকাল তা হতে পারে আমাদের পরিবারেরও।

আমরা পরিবর্তন চাইলে এখনই চাই—কারণ আগামীবার সংবাদে নাম আসতে পারে আপনার সন্তানের।

আমরা যদি এখনই প্রশ্ন না তুলি—কেন একজন শিক্ষার্থী এতটা একা হয়ে পড়ে যে মৃত্যুই তাকে মুক্তির পথ মনে হয়?

পরিবর্তন শুরু হতে হবে পরিবার থেকে—যেখানে সন্তানের চেষ্টা উদযাপন পায়, ফলাফল নয়। শুরু হতে হবে শ্রেণিকক্ষ থেকে—যেখানে শিক্ষক কেবল পাঠদাতা নন, সহানুভূতির নৌকার মাঝি। এবং শুরু হতে হবে সমাজ থেকে—যেখানে ব্যর্থতা লজ্জার নয়, শিখার সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়


লেখকের ব্যক্তিগত প্রতিবাদ এবং প্রতিভার অবমূল্যায়নের নীরব সংকট

আমি এই প্রতিবেদন লিখিনি কেবল একজন নাগরিক হিসেবে—আমি লিখেছি একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে, একজন প্রশ্নকারী হিসেবে, একজন গভীরভাবে ব্যথিত মানুষ হিসেবে।

আমি চাই, শিক্ষার্থীরা বুঝুক—“ফেল মানে প্রতিভার পরাজয় নয়, বরং নিজের পথ খুঁজে পাওয়ার আরেকটি সুযোগ।”

আমি চাই, পরিবার বলুক—“তোমার মূল্য নম্বরে নয়, তোমার স্বতন্ত্রতা, চেষ্টা, চরিত্র আর স্বপ্নে।”

এই লেখা শুধুমাত্র একটি নিবন্ধ নয়—এটি আমার একাগ্র প্রতিবাদ, অটল প্রত্যয় এবং নীরবে থেমে থাকা আমার প্রতিভার করুণ আর্তনাদ।

আমি বিশ্বাস করি—বাংলাদেশে শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রকৃত পরিবর্তন কখনোই সম্ভব নয়, যতক্ষণ না দুর্নীতির পরাজয় এবং প্রতিভার স্বীকৃতির জাগরণ ঘটে

যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নম্বরের ওপরে মানুষকে না দেখি, ততক্ষণ এই জাতি উন্নয়নের পরিসংখ্যান দেখাবে, কিন্তু সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটাবে—প্রতিদিন, নিঃশব্দে।

লেখকের ব্যক্তিগত প্রতিবাদ এবং প্রতিভার অবমূল্যায়নের নীরব সংকট

আমি এই প্রতিবেদন লিখিনি কেবল একজন নাগরিক হিসেবে—আমি লিখেছি একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে, একজন প্রশ্নকারী হিসেবে, একজন গভীরভাবে ব্যথিত মানুষ হিসেবে।

আমি চাই, শিক্ষার্থীরা বুঝুক—“ফেল মানে প্রতিভার পরাজয় নয়, বরং নিজের পথ খুঁজে পাওয়ার আরেকটি সুযোগ।”

আমি চাই, পরিবার বলুক—“তোমার মূল্য নম্বরে নয়, তোমার স্বতন্ত্রতা, চেষ্টা, চরিত্র আর স্বপ্নে।”

এই লেখা শুধুমাত্র একটি নিবন্ধ নয়—এটি আমার একাগ্র প্রতিবাদ, অটল প্রত্যয় এবং নীরবে থেমে থাকা আমার প্রতিভার করুণ আর্তনাদ।

আমি বিশ্বাস করি—বাংলাদেশে শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রকৃত পরিবর্তন কখনোই সম্ভব নয়, যতক্ষণ না দুর্নীতির পরাজয় এবং প্রতিভার স্বীকৃতির জাগরণ ঘটে

যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নম্বরের ওপরে মানুষকে না দেখি, ততক্ষণ এই জাতি উন্নয়নের পরিসংখ্যান দেখাবে, কিন্তু সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটাবে—প্রতিদিন, নিঃশব্দে।

অপসাফল্যকে ব্যর্থতা মনে করা উচিত নয়, বরং তা হলো প্রতিভার অবমূল্যায়ন—এটাই আমাদের প্রকৃত ব্যর্থতা।

আমি এই লেখাটি লিখেছি কারণ আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মানুষের ভেতরে থাকা সম্ভাবনা, স্বপ্ন ও সত্তাকে রক্ষা করা এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

Tags:
3/related/default